Ednoub Private Program

ঔষধ খাওয়া বারণ যেসব ক্ষেত্রে Method of Taking Medicine



ঔষধ খাওয়া বারণ যেসব ক্ষেত্রে


এটা যদি বলি ডাক্তার হয়ে নিজের পায়ে কুড়াল মারা হবে, আঁতকে ওঠার কিছু নাই। শিশুর খাবার নিয়ে যতই বলি তবুও মায়েরা ততটা আস্থা রাখতে চান না। পরিবার আর পরিচিতদের জ্ঞানের চাপেই হোক আর নিজের উপর অতিরিক্ত আস্থাই হোক, কেন যেন ঘুরেফিরে তারা ব্যাপারটাকে খুব কঠিন করে ফেলেন। তাই খাবার নিয়ে আলোচনা বন্ধ। আজ বলি ঔষধ নিয়ে। কেন এবং কখন ঔষধ খাওয়াবেন না! মজার ব্যাপার না? ডাক্তার বলছে ঔষধ না খাওয়ানোর কথা।




১. জ্বরের ঔষধ নাপা, লাগবে আগে জ্বর মাপাঃ


প্রথমেই বলি কমন সমস্যা জ্বর ও তার ঔষধ নিয়ে। যে কোন ভাইরাস জ্বরই টানা তিনদিন থাকে, ঔষধ খাওয়ালেও কমে না বা কমলেও আবার চলে আসে। অনেকেই যেটা করেন, জ্বর না মেপেই গা হাত দিয়ে গরম পেলে ঔষধ দিয়ে দেন। অথচ আপনার আর বাচ্চাদের গায়ের তাপমাত্রায় সবসময়ই ১-২° পার্থক্য থাকে।

কখন ঔষধ খাওয়াবেন নাঃ

বাচ্চা বিশেষ করে নবজাতকের তাপমাত্রা ১০০° F পর্যন্ত স্বাভাবিক ধরা হয় এবং এদের মাথা সবসময়ই গায়ের তুলনায় গরম থাকবে, এটা স্বাভাবিক। কাজেই মাথা গরম দেখেই ঔষধ খাওয়ানো যাবে না।

জ্বরের ১ম তিনদিন এর কারণ সম্পর্কে ধারনা না পাওয়া গেলে এবং ভাইরাস জ্বর হলে প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোন ঔষধ দিয়ে লাভ নাই। এন্টিবায়োটিক ভাইরাসের সংক্রমণে কোন কাজ করে না। ঔষধ দিলেও টানা তিনদিন জ্বর কমবে না এবং একেবারে সেরে যেতে ৭-৯ দিন পর্যন্ত লাগতে পারে।

কখন ঔষধ খাওয়াবেনঃ

৩-৫ দিন হয়ে গেলে অন্য কোন সমস্যা দেখা দিলে বা শরীরে থাকা ব্যাকটেরিয়ারা যেন এই সুযোগে রোগ তৈরি না করে এজন্য আমরা অনেক সময় রোগী ভেদে এন্টিবায়োটিক দিয়ে থাকি।

জ্বর হলে ঔষধের পাশাপাশি গা মুছে দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে পানি পট্টি না দিয়ে, ভেজা গামছা বা পাতলা কাপড় পানি চিপে ফেলে দিয়ে সারা গা মেঝে মোছার মতো করে মুছে দিলে জ্বর কমতে সাহায্য করে।

পাশাপাশি পানি, তরল খাবার, জাউ, স্যুপ যেটা খেতে বাচ্চা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে তাই দিবেন। ৬ মাসের নিচের বাচ্চাকে ঘন ঘন বুকের দুধ দিবেন। তবে খাওয়া নিয়ে জোড় করা যাবেনা কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে পেশাব যেন ৪ বারের কম না হয়।

জ্বর ১০২°f হয়ে গেলে তখন সাপোসিটারী দিতে পারেন। মুখের ঔষধে তখন আর কাজ করে না।

কেন জ্বরে প্যারাসিটামল খাওয়াবেন না?

অনেকেই গা গরম দেখলেই প্যারাসিটামল খাইয়ে দেন। ঘুমন্ত বাচ্চাকে টেনেটুনে তুলে ঔষধ শুরু করেন বা জ্বর করছে না দেখে শুরুতেই এন্টিবায়োটিক দিয়ে ফেলেন। এটা ঠিক না।

প্যারাসিটামল ঘন ঘন খাওয়ালে বা প্রয়োজন ছাড়া খাওয়ালে এটা কিডনির উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। ঔষধের বজ্য অধিক হলে কিডনি বিকল হয়ে বাচ্চা মারাও যেতে পারে। জ্বর একটা উপসর্গ বা লক্ষণ মাত্র।শরীরে রোগের সংক্রমণ হলে জ্বর আসে। জ্বর কমবে তখন যখন ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া নিস্ক্রিয় হবে। তাই খুব প্রয়োজন ছাড়া জ্বরের ঔষধও অযথা না খাওয়ানোই ভালো।

তবে যেসব বাচ্চার জ্বরের সাথে খিচুনি হয় তাদের জ্বর কমিয়ে রাখাটা দরকার নাহলে খিচুনি হলে ব্রেইন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।




২. ওরস্যালাইন, বন্ধু তুমি শত্রু তুমিঃ


এক মুঠ গুড়, এক চিমটি লবণ........... ঘুটা! ঘুটা! এই বিজ্ঞাপনটি অনেকেই দেখেছেন। পাতলা পায়খানা হলেই স্যালাইন খাওয়াবেন এটা জানতে ডাক্তার লাগে না। কিন্তু স্যালাইন কখন খাওয়াবেন, কতটুকু খাওয়াবেন, কিভাবে খাওয়াবেন এটা জানা জরুরি।

অনেকেই বেশী ঘামলেই, এক দুবার পায়খানা করলেই, বাচ্চা দূর্বল এজন্য স্যালাইন বানিয়ে খাইয়ে দেন। এটা ঠিক না। বাচ্চাদের আলাদা করে কম ঘনত্বের স্যালাইন বাজারে পাওয়া যায়, ওআরএস- এন, নিওস্যালাইন বিভিন্ন নামে। বড়দের স্যালাইন খাওয়ালে বা প্রয়োজন ছাড়া স্যালাইন খাওয়ালে এর খনিজ লবণগুলো কিডনিতে গিয়ে জমা হয় ও কিডনি বিকলও করে দিতে পারে, শরীরে লবণের পরিমাণের কম বেশী হলে বাচ্চা মারাও যেতে পারে।

আরেকটা কাজ আগে খুব করতেন অভিভাবকরা, বাচ্চা মানুষ পুরো স্যালাইন তো খেতে পারবেনা, তাহলে অল্প অল্প করে বানিয়ে খাওয়াই বলে একটু করে স্যালাইন দুতিন চামচ পানিতে গুলে বাচ্চাকে খাইয়ে দিতেন। পরবর্তীতে এই বাচ্চাগুলো শ্বাসকষ্ট ও পেট ফুলে কিডনি বিকল হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে খুব তাড়াতাড়ি মারা যেতো। এখনো হঠাৎ হঠাৎ এমন পাওয়া যায়। এটা মারাত্মক অপরাধ। স্যালাইন অবশ্যই পুরোটা আধালিটার পানিতেই গুলাতে হবে। নাহলে এর মধ্যে লবণের তারতম্য হয় যা উল্টো বিষের মতো কাজ করে৷




৩. মেট্রোনিডাজল, দেখেছেন এর ফলাফলঃ


শিশুদের বিশেষ করে ১ বছরের নিচে পাতলা পায়খানা ৯০ ভাগ কারনই হচ্ছে বদহজমের কারণে, খাবারে গন্ডগোল। পায়খানায় মিউকাস যাওয়া বা পিচ্ছিল হওয়াটা স্বাভাবিক ওদের জন্য, বদহজমে একটু বেশি যেতে পারে। এটাকে আমাশয় বলে না।

ইনফরমেশন হলে ব্যথা, বমি, জ্বর, পেট ফুলে যাওয়াও থাকবে, রক্ত গেলে আমাশয়। অথচ দুএকবার পাতলা পায়খানা হলেই অনেকে নিজেই মেট্রোনিডাজল সিরাপ এনে খাইয়ে দেন। অথচ এটা বাচ্চাদের ঔষধই না। বরং এর কর্কশ তিতকুটে স্বাদ বাচ্চার জিহবার স্বাদ নষ্ট করে দেয়, বমি হয়ে আরো পেট ফুলিয়ে ফেলে।




৪. কিছু হলেই ভিটামিন, নাম একটা লিখে দিনঃ


এক বছরের নিচের বাচ্চা রুচির কি বুঝে? খিদে লাগলে কাঁদবে, খেতে মজা হলে খাবে! খিদা তৈরি করার তো কিছু নাই। অথচ মায়েরা ভিটামিন না লিখে দিলে মন খারাপ করেন, ভিটামিন লিখে দিতে বললে ডাক্তার রাগ করেন।

ভিটামিন কেন দরকার?

দীর্ঘদিন জ্বরে ভুগলে বা দীর্ঘ মেয়াদী কড়া ঔষধ খেলে বা ক্রনিক রোগ যেমন, ক্যান্সার, যক্ষা, লিভার বা কিডনি ভিটামিন তৈরিতে অক্ষম, অপুষ্টিতে ভোগা বাচ্চাদের ভিটামিন খাওয়া জরুরি। এদের শুধু খাবারে ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ হয় না। বাড়তি ভিটামিন লাগে। এ ছাড়া কৃমিনাশক খেলে অনেকসময় অরুচি হয়, এজন্যও ভিটামিন দেয়া হয়। জিহ্বার স্বাদ চলে যায় জ্বরের তীব্রতায়, এজন্য টাইফয়েড জ্বরেও ভিটামিন দেয়া হয়।

ভিটামিন খাবারের বিকল্প নয়ঃ

একটা সুস্থ বাচ্চা যার জিহবায় কোন ঘা নাই তার রুচির কোন সমস্যা নাই। তার চাহিদা কম থাকতে পারে, বাছবিচার থাকতে পারে পছন্দ অপছন্দ থাকতে পারে যা ভিটামিন দিয়ে সারবে না। তাকে তার পছন্দ মতো খাবার যতটুকুই খাক, পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে। ভিটামিন এসব ক্ষেত্রে কোনো ঘাটতি পূরণ করে না বরং অযথা দেয়া হয় যেখানে শাকসবজি,ডিম, ফল খাওয়ালেই হয়।




৫. কৃমিনাশক নয় কথায় কথায়ঃ


অনেকেই আছেন, বাচ্চা একটু বমি বমি ভাব করছে সাথে পেট ব্যথা, হোক তা জ্বর বা পাতলা পায়খানার সাথে ; কৃমিনাশক খাইয়ে দিলেন হুট করে কৃমি হয়েচে ভেবে। অথচ এতে বরং আরো সমস্যা বাড়বে, বমি, ব্যথা বেড়ে পেট ফুলে একাকার।

আমরা অনেকেই কৃমিনাশক খাওয়ার সঠিক নিয়ম ও সময় জানিনা। এটা যে অসুস্থ অবস্থায় খাওয়ানো যায় না তাও জানি না। অনেকেই জানি না, এক বছরের নিচে সাধারণত কৃমিনাশক দেয়া হয় না।




৬. এন্টিবায়োটিক, ব্যবহার জানেন তো সঠিক? :


এন্টিবায়োটিক নিয়ে আগেও বলেছি, অনেকেই বলেছেন। দরকারের সময় এন্টিবায়োটিক কাজ করে না, অসুখ ভালো হয় না ; এসবই মুড়ি মুড়কির মতো এন্টিবায়োটিক খাওয়ার ফল।

অনেকেই আগের প্রেসক্রিপশন দেখে এন্টিবায়োটিক খাইয়ে ফেলেন। অথচ আগের বার হয়তো জ্বর এসেছিল টাইফয়েড, এবার ভাইরাল ফিভার।আগেরবার ঠান্ডা ছিল টনসিলের সমস্যায় , এবার হয়তো ফুসফুসে ঘা, যার ঔষধ অন্যকিছু।

সবচেয়ে বেশি এন্টিবায়োটিকের অপব্যবহার হয় পাতলা পায়খানায়। পাঁচ দিনে ভালো হয়ে যাওয়ার কথা, ধৈর্যের অভাবে তিনবার এন্টিবায়োটিক পাল্টানো শেষ অথচ সমস্যা ছিল হয়তো খাবারে। ভাইরাল ডায়রিয়াতে পানির পরিমান বেশী হলেই মায়েরা অস্থির হয়ে যান, যেখানে এতে এন্টিবায়োটিক দিলে বরং খাদ্যনালীর উপকারি ব্যাকটেরিয়া মরে ডায়রিয়া আরো বেড়ে যায়।




৭. ডাক্তার ভেদে ঔষধ নিয়ে অভিজ্ঞতা, প্রশ্ন নয় যথাতথাঃ


চেম্বার প্র্যাকটিসে বইপত্রের চিকিৎসার চেয়ে অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয় বেশী। একজন তার রোগীদের একরকম চিকিৎসা দিয়ে উপকার পেয়েছেন, তার কমিউনিটিতে রোগটা ঐ ঔষধে কাজ করেছে। আবার একই রোগে অন্য এলাকায় আরেক ডাক্তার আরেকভাবে ঔষধ দিয়ে ভালো ফল পেয়েছেন। তাই তাদের নিজের জায়গায় তাড়া ঠিক আছেন।

এখন আপনি যদি তৃতীয় একজনকে এদের ঔষধ নিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ঔষধগুলো ঠিক আছে কি না তাহলে কি সেটা উচিত হবে না ৩য় ব্যক্তি বুঝবে কেন কোন ঔষধ ঠিক ছিল? এ ক্ষেত্রে কোন ডাক্তারেরও উচিত নয় আরেকজনের দেয়া চিকিৎসা নিয়ে মন্তব্য করা যদি না কোন বড় ধরনের ভুল থাকে না বা ভূয়া ডাক্তার না হয়ে থাকে।


আরেকটা বড় জিনিস হলো বিশ্বাস। অনেক রোগীই দেখবেন ডাক্তারের কাছে গিয়ে সুস্থ। ঔষধই লাগে না তেমন, ডাক্তারের হাসিমুখে দুটো কথা শুনেই রোগ ভালো যা আবার অন্য কারো কাছে গেলে কাজ হয় না। এর নাম আস্থা আর রোগ সাড়ে ঔষধে নয়, মনোবলে।


মনের জোড়েও কিন্তু বড় অসুখ কাবু করতে পারে না আবার মন দূর্বল থাকলে সামান্য ঠান্ডা কাশিতেও মানুষ শয্যাশায়ী হয়ে পরে।

কাজেই অকারণ ঔষধ নয়, ধৈর্য্য ধরে বাচ্চার যত্ন করতে হয়। কারন সেবাযত্ন আর খাবার, পথ্যেই কিন্তু ৮০ ভাগ রোগ এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। অযথা ঔষধ খাইয়ে বাচ্চাকে দূর্বল করা কোনো কাজের কথা নয়।


ডাঃ লুনা পারভীন
শিশু বিশেষজ্ঞ, বহির্বিভাগ
ঢাকা শিশু হাসপাতাল
শ্যামলী।



EDNOUB is the best helpline for the learners of English Language & Literature. It’s an international helpline by EDNOUB [www.facebook.com/groups/EDNOUB]. Enrich your skills on English keep visiting our blog regularly. Stay with us. Thanks a lot.

Post a Comment

0 Comments